Categories:

ওগো সূর্যরশ্মিপায়ী
শত শত শতাব্দীর দিন ধেনু দুহিয়া সদাই
যে তেজে ভরিলে লজ্জা মানবেরে তাই করি দান
করেছ ভাগ্যদেবী, দিলেন তারে পরম সস্মান। -রবি ঠাকুর

এক সময়ের জঙ্গুলে পৃথিবীকে সাফ সুতরো করে সভ্যতা গড়ে ছিল মানুষ। তারাই আবার পরবর্তীতে গাছ বাঁচাতে, সংরক্ষণ করতে তৈরি করে বোটানিক গার্ডেন। বোটানিক গার্ডেনের ইতিহাস সেও অনেক পুরোনো, গার্ডেনের উদ্দেশ্য মোটামুটি একই থেকে গেছে। বিভিন্নভাবে নান্দনিক, বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে দিন দিন বোটানিক গার্ডেনের জৌলুস বাড়িয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর গার্ডেন যতটা নয়াভিরাম ততোটাই সুযোগ রয়েছে এতে গবেষণার। একটি গার্ডেন বিশাল কর্মযজ্ঞ যেন। একে সজ্ঞায়িত করা হয়েছে এভাবে- A botanical garden is a garden dedicated to the collection, cultivation and display of a huge array of plants labeled with their botanical name.

Botanic garden শব্দটি সংস্কৃতি ও বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য বহন করে। একটি প্রজন্মকে সংরক্ষণের ইচ্ছে উপলব্ধি করতে ও বাড়াতে সাহায্য করে। এখন পৃথিবীতে মোট বোটানিক গার্ডেনের সংখ্যা প্রায় ১৭৭৫টি যা প্রায় ১৪৮ দেশ জুড়ে রয়েছে এবং আরোও অনেক নির্মানাধীন।

পৃথিবীর প্রথম বোটানিক গার্ডেন ধরা হয় ইটালির Padua Garden কে। ঔষধী উদ্ভিদের জন্য আজও এর গঠন কাঠামো একই রয়েছে। পডুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদেও জরুরী প্রয়োজনে ১৫৪৫ সালে ভেনিসে এটা প্রতিষ্ঠিত করা হয়। ১৫৪৬ থেকে ১৫৫২ সাল পর্যন্ত ১৫০০ বিভিন্ন রকম গাছ ছিল বাগানটিতে। ঔষধী উদ্ভিদের সংগ্রহের দিক থেকে Padua Garden টি এখনও অনন্য হয়ে আছে। ৪৬০ বছর পরেও গার্ডেনটি ফার্মেসি ও বোটানির শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানে ব্যবহার হয়ে আসছে। ঔষধী উদ্ভিদ এ গার্ডেনের বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ অংশ হিসেবে আছে। ৬০০০ বৃক্ষের মধ্যে রয়েছে ঐতিহাসিক উদ্ভিদ, জলজ উদ্ভিদ, বিষাক্ত উদ্ভিদ, অর্কিড এবং বিরল উদ্ভিদ সংগ্রহ।

এশিয়ার দিকে যদি দৃষ্টি দেই-চৈনিক সভ্যতার ইতিহাসের তাৎপর্যপূর্ণ একটি অংশ হলো চীনের বোটানিক গার্ডেন। একটি বাগানের যা যা করা যেতে পারে তার বিস্ময়কর প্রতিফলন পাওয়া যায় এ সকল বাগানগুলোতে। খ্রীষ্ট পূর্ব সময় থেকে রাজ বংশগুলো সম্রাটের বাসস্থান ও কার্যালয় আকর্ষনীয় করার লক্ষ্যেই বাগান সাজাতো।

চীন এবং সমগ্র বিশ্বের সংগে তুলনা করলে বাংলাদেশের বোটানিক্যাল গার্ডেন বা উদ্যান শিল্পের ইতিহাস একেবারেই নতুন। উদ্ভিদের সংরক্ষণ ও চিত্তবিনোদনের স্থান হিসেবে বাংলাদেশে মোটামুটি নয়টি বোটানিক্যাল গার্ডেন রয়েছে। সেগুলো হলো ১. ন্যাশনাল বোটানিক্যাল গার্ডেন, ঢাকা। ২. বলধা গার্ডেন, ৩. বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বোটানিক্যাল গার্ডেন, ৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বোটানিক্যাল গার্ডেন, ৫. চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বোটানিক্যাল গার্ডেন, ৬. সীতাকুন্ড বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকো পার্ক, ৭. বিএফআরআই ব্যাম্বো আরবুরেটাম, ৮. রজারকুল বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং ৯. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বোটানিক্যাল গার্ডেন।

এ বোটানিক্যাল গার্ডেনগুলো মুলতঃ সরকার নিয়ন্ত্রিত এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

১. ন্যাশনাল বোটানিক্যাল গার্ডেন হলো বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ উদ্ভিদ সংরক্ষণ কেন্দ্র যা ১৯৬১ সালে প্রতিষ্টিত হয়। ৮৪ হেক্টর এলাকা জুড়ে রয়েছে ২৫৫ প্রজাতির ২৪২০০ টি গাছ বৃক্ষ জাতীয় গাছ, ৩১০ প্রজাতির ৮৪০০ টি বিরুৎ জাতীয় এবং ৮৫ প্রজাতির ১০৪০০ টি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ।


২. বলধা গার্ডেন হলো সর্বপ্রাচীন গার্ডেন বাংলাদেশের ইতিহাসে স্থাপিত হয় ১৯০৯ সালে ৩.১৫ একর জমিতে ৪১৬ প্রজাতির ২৫১ গণ ও ৯৩ পরিবার উদ্ভিদ নিয়ে। সর্বমোট প্রায় ১১৫ টি বৃক্ষ, ১৬২ টি গুল্ম, ১০৮ বিরুৎ এবং ৩১ টি লতা জাতীয় উদ্ভিদ আছে।
৩. বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় বোটানিক্যাল গার্ডেন হলে দ্বিতীয় বৃহত্তম বোটানিক্যাল গার্ডেন যা ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
৪. বিএফআরআই ক্যাম্পাসে ১.৫ হেক্টর এলাকা জুড়ে বাশের বড় সংগ্রহ গড়ে উঠেছে ২৭ টি বাঁশের প্রজাতির মধ্যে রয়েছে ৬টি কে exotic species হিসেবে সনাক্ত করা হয়েছে। এখানে ঔষধী গাছ আছে ১ হেক্টর এলাকায় প্রায় ৪০ প্রজাতির। বেতের সংগ্রহ ০.৫ হেক্টর এলাকায় প্রায় সাত প্রজাতির।
৫. কক্সবাজার বোটানিক্যাল গার্ডেন রামুর রজারকুল ইউনিয়নের রামকোর্ট সংরক্ষিত এলাকায় অবস্থিত। ২০০৫ সালে ১৬ একর এলাকায় এটি গড়ে তোলা হয়।
৬. সীতাকুন্ড বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকো পার্ক, বাংলাদেশের প্রথম ইকোপার্ক যা একই সঙ্গে বোটানিক্যাল গার্ডেন যেটা রয়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার চন্দ্রনাথ পাহাড়ে। ২০০১ সালে ৮০৮ হেক্টর এলাকা জুড়ে এর ব্যাপ্তি। কেবলমাত্র ১ টি সাপ্তাহিক ছুটিতে ২৫০০০ দর্শনার্থী এই পার্কটিতে আসে এমন রিপোর্ট আছে।
৭. চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৪ সালে ৬০ একর জমি নিয়ে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিন দিকে অবস্থিত। বোটানী বিভাগের নিয়ন্ত্রনে এটি চালিত হয়।

বাংলাদেশের বোটানিক্যাল গার্ডেনের কার্যক্রম সীমিত। সরকার নিয়ন্ত্রিত বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক কেবলমাত্র উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও দর্শনার্থীদের চিত্তবিনোদনের জন্য ব্যবহার হচ্ছে। মাঝে মাঝে বিভিন্ন বিজ্ঞানীগন গবেষণার কাজ করে থাকেন কিন্তু গার্ডেনের নিজস্ব গবেষণা আলাদা শাখা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত বোটানিক গার্ডেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ফিল্ড ল্যাব হিসেবে, উদ্ভিদের সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া স্কুল, কলেজ, সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেশী বিদেশী দর্শনার্থীদের বেশ আকর্ষণ করে।

সরকারী ও বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত বাংলাদেশে একটি মাত্র বেসরকারী প্রতিষ্ঠান Plant Conservation and Research Foundation বোটানিক গার্ডেন কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি এবং সহায়তায় দেশের ও দক্ষিণ এশিয়ায় দেশগুলোর বোটানিক গার্ডেন নেটওয়ার্ক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।

বলধা গার্ডেনের পানির অভাবে দূর্লভ গাছগুলো সব মরে যাচ্ছে। খুবই দুঃখজনক সংবাদ খবর এটি।

আমাজন বন পুড়ে শেষ হচ্ছে। উষ্ণ বিশ্ব থেকে চুরি যাচ্ছে সবুজ। হতদরিদ্র, ক্লিস্ট মুখগুলো বেড়েই চলেছে। বেড়ে চলেছে গৃহহীন মানুষের মিছিল। সুশীতল জল ভরা গাঙ বেয়ে আসে না মিস্টি হাওয়া আফসোসের দীর্ঘশ্বাস বুকের কোন গভীর থেকে বেরোয় তার তলও আর স্পর্শ করা যায় না।

Tags:

No responses yet

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *